পর্ব ১০: একটি কঠিন সিদ্ধান্ত
নিলয় ও ঐশীর সম্পর্ক এখন আরও স্থিতিশীল। তারা একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা ধরে রেখেছে। তবে জীবন সহজ হতে দেয় না। এবার তাদের সম্পর্ককে একটি বড় পরীক্ষা দিতে হবে, যেখানে তাদের একসঙ্গে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব
নিলয় তার অফিসে একটি বড় প্রমোশনের জন্য নির্বাচিত হয়। তবে এই প্রমোশনের সঙ্গে একটি শর্ত জড়িত। তাকে ছয় মাসের জন্য দেশের বাইরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিতে হবে।
নিলয় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে খবরটি ঐশীকে জানায়।
“ঐশী, এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য বিশাল একটা সুযোগ। তবে এই ছয় মাস আমাদের আলাদা থাকতে হবে। আমি জানি, এটা কঠিন হবে, কিন্তু আমি চাই তুমি আমাকে সাপোর্ট করো।”
ঐশী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আমি বুঝতে পারছি এটা তোমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তুমি ছয় মাস বাইরে থাকবে? আমরা কীভাবে এই দূরত্ব সামলাবো?”
ঐশীর দ্বিধা
ঐশী নিলয়কে সমর্থন করতে চায়, কিন্তু তার মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দেয়।
“তোমার অনুপস্থিতিতে যদি সম্পর্ক দূরত্বে ভোগে? আমি একা এই সময়টা কাটাতে পারব তো?”
নিলয় তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে,
“আমাদের বিশ্বাসই আমাদের শক্তি। আমি প্রতিদিন তোমার সঙ্গে কথা বলব। আর ছয় মাস এমন দীর্ঘ সময় নয়। আমরা এটা সামলাতে পারব।”
তবুও, ঐশীর মনে ভয় কাটে না।
অন্যদিকে একটি চমকপ্রদ খবর
ঐশীও তার অফিস থেকে একটি নতুন প্রজেক্টের প্রস্তাব পায়। তবে এটি এমন একটি কাজ যেখানে তাকে প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় দিতে হবে। নিলয় দেশের বাইরে থাকলে, এই কাজের চাপ একা সামলানো তার জন্য কঠিন হবে।
ঐশী নিলয়কে বলে,
“আমার অফিস থেকেও নতুন প্রজেক্টের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তোমার অনুপস্থিতিতে আমি একা কিভাবে সব সামলাবো? এই দায়িত্ব কি আমার নেওয়া উচিত?”
নিলয় একটু ভেবে বলে,
“আমাদের দুজনেরই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে। তুমি যদি মনে করো, তুমি এটা সামলাতে পারবে, তাহলে আমি তোমাকে পুরোপুরি সমর্থন করব।”
পরিবারের চাপে সিদ্ধান্ত জটিল হয়
ঐশী এবং নিলয়ের পরিবার এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে।
ঐশীর মা বলে,
“নিলয় বাইরে চলে গেলে তুমি একা পড়ে যাবে। এত বড় দায়িত্ব নেওয়া কি ঠিক হবে?”
অন্যদিকে, নিলয়ের বাবা বলেন,
“এমন সুযোগ বারবার আসে না। তোমরা যদি একে অপরকে ভালোবাসো, তাহলে ছয় মাস কিছুই না।”
এই ভিন্নমত তাদের সিদ্ধান্তকে আরও কঠিন করে তোলে।
কঠিন কথোপকথন
এক রাতে, নিলয় এবং ঐশী নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর আলোচনা করে।
নিলয় বলে,
“আমি চাই না তুমি আমার জন্য তোমার ক্যারিয়ারকে থামিয়ে দাও। আমি জানি, এটা আমাদের জন্য কঠিন সময় হবে। কিন্তু যদি আমরা আমাদের স্বপ্নগুলো ত্যাগ করি, তাহলে একদিন হয়তো নিজেদের ওপরই রাগ করব।”
ঐশী বলে,
“তোমার কথা ঠিক। কিন্তু আমি শুধু ভয় পাচ্ছি। আমরা যদি এই দূরত্বের কারণে আরও দূরে সরে যাই?”
নিলয় তার হাত ধরে বলে,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এই ছয় মাসের পর আমাদের সম্পর্ক আগের চেয়েও শক্তিশালী হবে।”
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত
তারা সিদ্ধান্ত নেয়, উভয়েই তাদের নিজ নিজ প্রজেক্ট গ্রহণ করবে। তবে প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার প্রতিজ্ঞা করে। তারা তাদের ভালোবাসার ওপর ভরসা রাখে এবং নতুন চ্যালেঞ্জকে একসঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়।
বিদায়ের মুহূর্ত
নিলয় যখন দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে, ঐশী তার হাত ধরে বলে,
“আমাদের প্রতিজ্ঞা মনে রেখো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। তুমি ফিরে এলে আমাদের জীবন আবার আগের মতো হবে।”
নিলয়ও বলে,
“আমি প্রতিদিন তোমার সঙ্গে কথা বলব। ছয় মাস চোখের পলকে কেটে যাবে। তুমি শক্ত থেকো।”
তাদের চোখে জল, কিন্তু মনে আশা।
পর্বের সমাপ্তি।
পরবর্তী পর্বে: পর্ব ১১: দূরত্বের বন্ধন
তাদের সম্পর্ক দূরত্বের নতুন পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। এই সময়ে কি তাদের প্রতিজ্ঞা অটুট থাকবে, নাকি কোনো নতুন বাধা তাদের ভালোবাসাকে চ্যালেঞ্জ করবে?
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments