পর্ব ৮: সম্পর্কের পরীক্ষা
নিলয় এবং ঐশীর সম্পর্ক ক্রমেই আরও গভীর হচ্ছে। তারা নিজেদের প্রতিজ্ঞা মেনে চলার চেষ্টা করছে, কিন্তু জীবন তাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এনে হাজির করে। এইবারের চ্যালেঞ্জ শুধু তাদের ভালোবাসার নয়, তাদের মানসিক শক্তি এবং প্রতিজ্ঞারও পরীক্ষা।
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি
নিলয়ের অফিসে হঠাৎ একটি বড়ো প্রজেক্ট আসে, যা তাকে অনেক বেশি ব্যস্ত করে তোলে। তার কাজের চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে সে প্রতিদিন অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতে শুরু করে। ঐশী প্রথমে এই বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার একাকীত্ব এবং হতাশা বাড়তে থাকে।
একদিন, অফিস থেকে ফেরার পর নিলয় খুব ক্লান্ত। ঐশী তাকে জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার কি এখন সত্যিই এত কাজের চাপ? আমরা তো প্রতিজ্ঞা করেছিলাম একে অপরের জন্য সময় রাখবো।”
নিলয় গভীর শ্বাস নিয়ে বলে,
“ঐশী, আমি জানি। কিন্তু এই প্রজেক্টটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি এটা সফল হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ আরও ভালো হবে।”
ঐশী হতাশ হয়ে চুপ থাকে, কিন্তু তার ভেতরে একধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়।
অন্যদিকে ঐশীর সমস্যা
ঐশীর অফিসে এক নতুন সহকর্মী, সামি, তার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। সামি তার কাজের প্রশংসা করে এবং মাঝে মাঝে তার সঙ্গে বাড়তি সময় কাটানোর চেষ্টা করে।
একদিন সামি সরাসরি বলে,
“ঐশী, আমি জানি তুমি বিবাহিত, কিন্তু আমি মনে করি তোমার সঙ্গে একটা সুন্দর বন্ধুত্ব হতে পারে। তুমি কি এটাকে একটু ভিন্নভাবে ভাবতে পারো না?”
ঐশী সামিকে স্পষ্টভাবে জানায় যে সে তার প্রতি আগ্রহী নয়। তবে সামি হাল ছাড়ে না এবং ঐশীর প্রতি নিজের মনোভাব দেখাতে থাকে।
দূরত্ব আরও বাড়ে
নিলয়ের ব্যস্ততা এবং ঐশীর একাকীত্ব তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। একদিন, ঐশী রাগের সঙ্গে বলে,
“তুমি তো শুধু তোমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আমার কথা একবারও ভাবো না। আমি এখানে একা একা পড়ে থাকি, আর তুমি তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছো। এই সম্পর্ক কি একতরফা হয়ে যাচ্ছে?”
নিলয় রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এবং শান্তভাবে বলে,
“তুমি বুঝতে পারছ না, ঐশী। আমি যা করছি, তা আমাদের দুজনের জন্যই। তুমি কি আমার অবস্থানটা একটুও বোঝার চেষ্টা করবে না?”
একটি ভুল বোঝাবুঝি
একদিন নিলয় সামিকে ঐশীর সঙ্গে দেখা করতে দেখে এবং ভুল বুঝতে শুরু করে।
সে রাগের সঙ্গে বলে,
“ঐশী, তুমি আমাকে বলোনি যে তোমার অফিসে এমন কেউ আছে, যে তোমার প্রতি আগ্রহী। এটা লুকানোর কারণ কী?”
ঐশী কষ্টের সঙ্গে বলে,
“আমি লুকাইনি, কারণ এটা আমার জন্য কোনো বিষয়ই না। তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস করতে না পারো, তাহলে এই সম্পর্কের কোনো মানে নেই।”
নিলয় বুঝতে পারে যে তার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর হয়ে গেছে, কিন্তু সে কিছু বলার সুযোগ পায় না।
একটি কঠিন রাত
সেদিন রাতে তারা একই ছাদের নিচে থেকেও একে অপরের থেকে অনেক দূরে। নিলয় জানে যে ঐশী তাকে ভালোবাসে, কিন্তু তার কাজের চাপ তাকে অন্ধ করে দিয়েছে। ঐশী জানে যে নিলয় তার জন্যই কঠোর পরিশ্রম করছে, তবু তার একাকীত্ব এবং হতাশা তাকে ক্ষতবিক্ষত করছে।
নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া
পরের দিন সকালে, নিলয় এবং ঐশী দুজনেই নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। তারা একে অপরের কাছে ক্ষমা চায় এবং প্রতিজ্ঞা করে যে যেকোনো চ্যালেঞ্জই হোক, তারা সবসময় একে অপরের পাশে থাকবে।
নিলয় বলে,
“আমি আরও ভালোভাবে সময় ম্যানেজ করার চেষ্টা করব। কিন্তু আমি চাই, তুমি আমাকে বলবে তোমার যে কোনো সমস্যার কথা।”
ঐশী বলে,
“আমি জানি তুমি আমাদের জন্য কষ্ট করছো। তবে আমিও চাই, আমরা একসঙ্গে এই সময়টা কাটিয়ে উঠি।”
একসঙ্গে শক্তিশালী হওয়া
এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই তাদের সম্পর্ক আরও গভীর এবং দৃঢ় হয়। তারা বুঝতে পারে যে ভালোবাসা শুধুই প্রতিজ্ঞার ব্যাপার নয়, বরং তা একসঙ্গে সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করার সাহস।
পর্বের সমাপ্তি।
পরবর্তী পর্বে: পর্ব ৯: বিশ্বাসের সেতু
তারা নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠনের চেষ্টা করবে। তবে এই বিশ্বাস কি তাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, নাকি আবার কোনো বাধা তৈরি হবে?
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments