পর্ব ৩: সন্দেহ ও বিভ্রান্তি
নিলয় এবং ঐশীর মধ্যে যে অস্বস্তি শুরু হয়েছিল, তা এখন আরও গভীর হয়েছে। মিথিলার নাম উঠে আসার পর থেকে তাদের মধ্যে কথাবার্তা স্বাভাবিক নেই। সম্পর্কের প্রতিটি ছোট মুহূর্তে যেন একে অপরের সন্দেহ তাড়া করে বেড়ায়।
অবিশ্বাসের ছায়া
ঐশী বারবার মনে করতে থাকে নিলয়ের ফোনে দেখা সেই বার্তাগুলো। মিথিলা কারা? কেন নিলয় তার সঙ্গে দেখা করেছিল?
একদিন রাতে, নিলয় অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত মুখে সোফায় বসতেই ঐশী বলে,
“তুমি সত্যিই আমাকে পুরোটা বলোনি, নিলয়। আমি তোমার ফোনে মিথিলার মেসেজ দেখেছি। তুমি কি আমাকে কিছু লুকাচ্ছ?”
নিলয়ের মুখ মুহূর্তের জন্য ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে নিজের সুর সামলে নিয়ে বলে,
“ঐশী, আমি তোমার কাছে সত্যিই কোনো মিথ্যা বলিনি। মিথিলা হঠাৎই যোগাযোগ করেছিল, পুরনো কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল। আমি তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে আমাদের জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই।”
ঐশী চুপচাপ শোনে, কিন্তু তার মনে সেই সন্দেহ থেকে যায়। সে বিরক্ত গলায় বলে,
“তাহলে তুমি সেটা আমাকে আগে বলোনি কেন? তুমি কি ভেবেছিলে আমি জানলে কোনো সমস্যা হবে?”
নিলয় ধীরে বলে,
“আমি ভেবেছিলাম, বললে তুমি হয়তো অযথা চিন্তা করবে। আর আমি চাইনি আমাদের মধ্যে কোনো অস্বস্তি আসুক।”
দূরত্বের শুরু
এরপর থেকে তাদের কথোপকথন ধীরে ধীরে কমে যায়। ঐশী কাজ শেষে বাসায় ফিরেও নিলয়ের সাথে খুব একটা কথা বলে না। নিলয়ও নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখে।
অফিসে বসে ঐশী বারবার মিথিলার মেসেজ নিয়ে ভাবতে থাকে। তার সহকর্মী রূপা একদিন তাকে দেখে বলে,
“তুমি আজকাল কিছুটা চিন্তিত লাগছ। সব ঠিক আছে তো?”
ঐশী কিছুক্ষণ দ্বিধা করে, তারপর বলে,
“রূপা, কখনো মনে হয় কি যে কারও সঙ্গে থাকার পরও তুমি একা বোধ করছ?”
রূপা একটু হেসে বলে,
“সম্পর্কের মধ্যে কখনো কখনো সন্দেহ আসতেই পারে। তবে সেটা দূর করার একমাত্র উপায় হলো খোলামেলা আলোচনা। কথাগুলো জমতে দিলে দূরত্ব শুধু বাড়তেই থাকবে।”
ঐশী মাথা নাড়ে, কিন্তু নিজে থেকে কিছু করতে দ্বিধায় থাকে।
ভুল বোঝাবুঝির চক্র
এদিকে নিলয়ও ঐশীর পরিবর্তিত আচরণ অনুভব করে। সে বুঝতে পারে, তাদের সম্পর্ক এখন নাজুক অবস্থায় আছে।
একদিন রাতে, নিলয় নিজেই কথা বলতে এগিয়ে আসে।
“ঐশী, আমরা এভাবে চলতে পারি না। তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছ নাকি?”
ঐশী সরাসরি তাকিয়ে বলে,
“তুমি কি চাও আমি সহজে বিশ্বাস করি? যখন তুমি নিজে কিছু লুকিয়ে রাখো?”
নিলয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমি জানি, তোমার মনে সন্দেহ আছে। কিন্তু ঐশী, বিশ্বাস ছাড়া আমরা কোথাও এগোতে পারবো না। আমি চাই তুমি আমার উপর ভরসা করো।”
ঐশী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“তুমি ঠিক বলছ, নিলয়। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের সময় দরকার। এই দূরত্বটা আমাদের সম্পর্কের জন্যই ভালো।”
নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা
তারা দুজনেই নিজেদের সময় দিতে রাজি হয়। ঐশী তার পুরনো শখগুলোতে ফিরে যায়—লেখালেখি আর ছবি আঁকা। নিলয়ও তার স্টার্টআপে মনোনিবেশ করে।
তবে একে অপরকে ছাড়া তাদের দিনগুলো যেন কিছুটা ফাঁকা লাগে।
পর্বের সমাপ্তি।
পরবর্তী পর্বে: পর্ব ৪: তৃতীয় ব্যক্তি
তাদের জীবনে নতুন একজনের আগমন ঘটবে, যা তাদের সম্পর্ককে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলবে।
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments