Clickadilla

Easy Technical Solutions

ভুল চিঠির ঠিকানা (The Love Letter's Secret)

 ভুল চিঠির ঠিকানা


"ভুল চিঠির ঠিকানা"

 

কোলকাতার ব্যস্ত শহর, গলির মোড়ে এক পুরনো বইয়ের দোকানে কাজ করত সৌম্য। সে ছিল শান্ত, লাজুক এবং নিজের মতো থাকা মানুষ। দিনগুলো বেশ একঘেয়ে কাটত তার। আর এসব একঘেয়েমি ভাঙ্গার মতো কোনো ইচ্ছাও তার মধ্যে ছিল না। তবে সৌম্যের একটি স্বভাব ছিল, সে পুরনো বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা চিঠি, নোট কিংবা কাগজের টুকরো পড়তে ভালোবাসত। একদিন তার হাতে পড়ল একটি পুরনো ডায়েরি, যার ভাঁজের মধ্যে একটি চিঠি আটকে ছিল।

চিঠিটি ছিল কোনো এক রূপা নামের মেয়ের, যার হৃদয়জুড়ে এক গভীর প্রেমের ব্যথা। চিঠিতে লেখা ছিল:

"প্রিয়তম,

আমি জানি, আমাদের জন্য এই সম্পর্ক স্বীকৃতি পাবে না। কিন্তু আমার হৃদয়ের গভীরে তুমি চিরকাল থাকবে। ভালো থেকো, মনে রেখো, কোথাও না কোথাও আমিও তোমার জন্য অপেক্ষায় আছি।

ভালোবাসা নিও,
রূপা।"

চিঠিটি পড়ে সৌম্যের মন কেমন করে উঠল। সে বুঝতে পারছিল, এই চিঠির পেছনে এক অসীম ব্যথা আছে, একটি অসমাপ্ত প্রেম আছে। তখন থেকেই সৌম্য প্রতিদিন চিঠিটি পড়তে শুরু করল। অদ্ভুতভাবে, চিঠিটি যেন তার হৃদয়ে এক অচেনা অনুভূতির জন্ম দিল।

কিছুদিন পর, সৌম্য ঠিক করল রূপাকে খুঁজে বের করবে। তাই চিঠির শেষ ঠিকানাটি নিয়ে সেই এলাকায় গিয়ে ঘুরতে শুরু করল। কিছু খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারল, অনেক বছর আগে এই ঠিকানায় সত্যিই রূপা নামে একটি মেয়ে থাকত। তবে মজার ব্যাপার, রূপা নাকি সেই বাড়িতে আত্মহত্যা করেছিল তার প্রেমিকের জন্য। সৌম্য এই তথ্য শুনে যেন আরও গভীর রহস্যে ডুবে গেল।

একদিন সন্ধ্যাবেলা, সৌম্য যখন রূপার বাড়ির আশেপাশে ঘুরছিল, তখনই হঠাৎ করে তার সামনেই একজন মেয়ে এসে দাঁড়াল। সৌম্য চমকে উঠল, কারণ এই মেয়েটির মুখে ঠিক রূপার মতোই একটি মিষ্টি হাসি। মেয়েটি সৌম্যকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি রূপাকে খুঁজছো?"

সৌম্য কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, "হ্যাঁ, আমি রূপার গল্প শুনেছি। আমি তাকে দেখতে চাই, তার চিঠি পড়ে আমার মনকে শান্ত করতে চাই।"

মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, "আমি রূপার ছোট বোন, পিয়ালি। তুমি যে চিঠি পড়েছো, তা আমার দিদির লেখা। সেই চিঠিটি পাওয়ার পর থেকে সে আর আমাদের কাছে ফিরে আসেনি।"

পিয়ালির সাথে কথা বলতে বলতে সৌম্যের মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করল। তাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল, তারপর সেই বন্ধুত্ব ক্রমে প্রেমে রূপ নিল। সময়ের সাথে সাথে সৌম্য বুঝতে পারল, রূপার না পাওয়া প্রেমকে সে পিয়ালির মধ্যে খুঁজে পেয়েছে।

কিন্তু, গল্পের মোড়টা তখনই ঘুরে গেল। একদিন পিয়ালির সাথে দেখা করার জন্য সৌম্য তার পুরোনো চিঠি এবং রূপার ডায়েরিটি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু পিয়ালি এল না। পরদিন সে পিয়ালির বাড়িতে গিয়ে জানতে পারল, আসলে পিয়ালি কোনদিনই ছিল না! রূপার আত্মারই একটা অংশ প্রতিফলিত হয়েছিল সৌম্যের জীবনে।

সৌম্য ভেঙে পড়ল, কিন্তু এক অদ্ভুত সত্য উপলব্ধি করল—মৃত্যু, সময় কিংবা দূরত্বও সেই ভালোবাসাকে থামাতে পারেনি। পিয়ালির মতো একজনের স্পর্শে, সেই প্রেমকে জীবন্ত করে তুলেছিল।

আজও সৌম্য সেই চিঠিটি নিজের কাছে রেখে দেয়, যেন রূপার অসমাপ্ত প্রেমের এক গল্পের শেষ লাইন লেখা হলো তারই জীবনে।

©2024, Easy Tech Solution

Post a Comment

0 Comments