Clickadilla

Easy Technical Solutions

অচেনা পথে (Love Beyond Time)

 
Love Beyond Time

 অচেনা পথে

 

বৃষ্টি ভেজা রাতে টিপটিপ করে ঝরছে বৃষ্টি। কলকাতার ব্যস্ত শহরের এক কোণে, হেঁটে চলেছে অর্ণব। হৃদয় ভারাক্রান্ত, চোখে বিষণ্ণতা। নতুন চাকরির জন্য আজ এসেছিল সে, কিন্তু দেখা গেল সব ভুল। সেই চাকরিটি ছিল অন্য এক অর্ণবের জন্য। ভ্রান্তির মাঝে, তার চারপাশের শব্দ হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল, যেন জীবন তার থেকে কিছু নিয়ে নিলো। হতাশ হয়ে নির্জন রাস্তার পাশে একটি কফি শপে ঢুকে পড়লো সে। এই কফি শপটি তার পরিচিত ছিল না, কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখলো এক মোহময়ী পরিবেশ।

কফি অর্ডার দিতে গিয়ে চোখে পড়লো কাউন্টারের পাশে বসে থাকা একটি মেয়ে। মেয়েটি যেন অন্য জগতের কেউ, চোখে এক অদ্ভুত উদাসী ভাব। অর্ণব মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখ সরাতে পারছিল না। এভাবেই, কিছুটা সাহস নিয়ে তার পাশে গিয়ে বসে পড়লো সে।

  • "হাই, আমি অর্ণব," বলতে বলতেই হেসে ফেললো অর্ণব।
  • মেয়েটি মাথা তুলে তাকালো, "তুমি এই দোকানে নতুন?"
  • "হ্যাঁ, আমি ভুল করেই এসেছি। তোমার নাম কী?"
  • "আমি মিথিলা।"

সেই পরিচয়ের পর থেকে দুজনের মাঝে এক অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা প্রায়ই এই কফি শপে দেখা করতো, অনেক কথা বলতো, মিষ্টি ঝগড়া হতো। একটা অদ্ভুত সম্মোহনে তারা দুজনেই একে অপরের সাথে জড়িয়ে পড়ছিল। এমনকি কফি শপের মালিকও তাদের মুগ্ধ হয়ে দেখতেন।

কিন্তু, মিথিলার মাঝে সবসময় একটি রহস্যময়তা ছিল। সে তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছুই বলতো না, ফোনে কথা বলতো না। একদিন, অর্ণব মিথিলাকে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি এতটা রহস্যময় কেন?"

মিথিলা মৃদু হেসে বললো, "কিছু মানুষ থাকে, যারা জীবনে অন্যদেরকে ছুঁয়ে যেতে আসে। তুমি তেমন একজন।"

দিন যায়, তারা আরও কাছাকাছি আসে। একদিন অর্ণব ঠিক করল মিথিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু সেইদিন কফি শপে গিয়ে দেখলো মিথিলা নেই। কফি শপের মালিকের কাছে জানতে চাইল, কিন্তু তিনিও কিছু বলতে পারলেন না।

দিন কয়েক খুঁজে মিথিলার ঠিকানা পেল অর্ণব। তার বাসায় গিয়ে দেখলো, দরজা খোলা। ভিতরে ঢুকতেই চোখের সামনে বিশাল একটি পুরোনো ছবি। ছবিতে মিথিলা, কিন্তু মুখে এক বিস্ময়। আরেকটু ভালো করে তাকাতেই সে দেখে, ছবির নিচে তার মৃত্যুর তারিখ - ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর!

অর্ণব চমকে উঠলো। তার সামনে যে মিথিলার সঙ্গে সে এতদিন ছিল, সে আসলে আর জীবিত নয়। ভয় আর বেদনার এক অসম্ভব অনুভূতি নিয়ে সে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল। কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো, মিথিলা তার কাঁধে হাত রাখছে, যেন তাকে থামাতে চাইছে।

মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে অর্ণব বুঝতে পারে, সে আসলে এক অদ্ভুত জগতের সাথে পরিচিত হয়েছে। মিথিলা তাকে পেছনে ফেলে না গিয়ে, তাকে একবার দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল কীভাবে ভালোবাসা অমর হতে পারে, সময় আর মৃত্যুর গণ্ডির বাইরে।

অর্ণব আবার ফিরে গিয়ে সেই কফি শপে বসলো। তার পাশে মিথিলার স্মৃতি যেন তার সাথে বসে আছে। "ভালো থেকো মিথিলা," বলে ফিসফিস করে, একা হাতে তার কফি কাপটি ধরে রাখে।

©2024, Easy Tech Solution

Post a Comment

0 Comments