পর্ব ১৩: একটি অপ্রত্যাশিত ঝড়
নিলয় বিদেশে কাজের জগতে ফিরে গেছে, আর ঐশীও তার ব্যস্ত জীবনে ফিরে এসেছে। দূরত্বের অভিজ্ঞতা থেকে তারা অনেক কিছু শিখেছে। তাদের প্রতিদিনের যোগাযোগ ভালোবাসার নতুন সেতু গড়ে তুলেছে। কিন্তু এই শান্ত সময়ের আড়ালে এক ঝড় আসছে, যা তাদের জীবনের সবকিছু ওলটপালট করে দিতে পারে।
একদিন সকালে, নিলয়ের ফোনে একটি অজানা নম্বর থেকে কল আসে। ওপাশ থেকে একজন নারীর কণ্ঠ শোনা যায়।
“হ্যালো, আমি তৃষা বলছি। তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে। তুমি কি একটু সময় দিতে পারবে?”
নিলয় বিরক্ত হয়।
“তৃষা, আমি আগেই বলেছি, আমার ব্যক্তিগত জীবনে তুমি দয়া করে হস্তক্ষেপ করো না।”
তৃষা চুপ করে কিছুক্ষণ থেকে বলে,
“তুমি যা ভাবছো, সেটা নয়। আমি তোমাকে শুধু সতর্ক করতে চাই। তোমার প্রজেক্টে বড় একটা সমস্যা আসতে চলেছে, আর সেটা তোমার ক্যারিয়ারকেও প্রভাবিত করতে পারে।”
নিলয় অস্বস্তি বোধ করে, তবে তৃষার কথায় সাড়া দেয়।
“আচ্ছা, অফিসে এলে বিস্তারিত জানাও।”
অন্যদিকে, ঐশী একটি অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ্য করে। সামি তার প্রতি আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। একদিন সামি সরাসরি তার কাছে এসে বলে,
“ঐশী, তোমাকে আর এই একাকীত্বে দেখতে পারছি না। তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই, যদি তুমি অনুমতি দাও।”
ঐশী কঠোরভাবে বলে,
“সামি, তুমি যা ভাবছো, সেটা কখনোই সম্ভব নয়। আমি নিলয়কে ভালোবাসি, এবং আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। দয়া করে আমার ব্যক্তিগত জীবনে এমন হস্তক্ষেপ বন্ধ করো।”
সামি তার সুর নরম করে।
“আমি শুধু তোমার ভালো চাই, ঐশী। যদি কোনোদিন আমার সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে বলবে।”
ঐশী এড়িয়ে যায়, তবে সামির আচরণ তার মনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
নিলয়ের অফিসে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে ভুল ধরা পড়ে, যার জন্য নিলয়কে দায়ী করা হয়। নিলয় বুঝতে পারে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই সমস্যাটি তৈরি করেছে।
তৃষা তার কাছে এসে বলে,
“আমি বলেছিলাম, তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটা কেবল তোমার ক্যারিয়ারের ওপর আঘাত নয়, তোমার ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
নিলয় চমকে ওঠে।
“তৃষা, তোমার এই কথার মানে কী?”
তৃষা নিচু স্বরে বলে,
“কেউ তোমার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করছে। তুমি যদি সত্যিটা জানতে চাও, তবে আমাকে বিশ্বাস করো।”
ঐশীও বাড়িতে একটি চিঠি পায়, যেখানে নিলয় সম্পর্কে কিছু ভুয়া তথ্য লেখা ছিল। চিঠিতে বলা হয়,
“তোমার স্বামী বিদেশে শুধু কাজ করছে না, আরও অনেক কিছু করছে। তুমি জানো না, সে আসলে কী করছে।”
ঐশীর মন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সে প্রথমে এই কথাগুলোকে পাত্তা না দিলেও, মনের কোণায় সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে।
এক সন্ধ্যায় নিলয় এবং ঐশীর মধ্যে কথোপকথন হয়।
“নিলয়, আজ একটা অদ্ভুত চিঠি পেয়েছি। এতে তোমার নামে কিছু অভিযোগ করা হয়েছে। এটা কি সত্যি?”
নিলয় অবাক হয়।
“ঐশী, আমি জানি না, এসব কীভাবে তোমার কাছে পৌঁছেছে। আমি তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, আমার জীবন সম্পূর্ণ স্বচ্ছ।”
ঐশী কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে,
“আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, আমাদের বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করছে।”
এই অপ্রত্যাশিত ঝড় তাদের সম্পর্কের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। তারা ঠিক করে, একসঙ্গে সত্যের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তাদের ভালোবাসার বন্ধন কি এই ষড়যন্ত্রের ঝড় পেরিয়ে টিকে থাকবে? নাকি নতুন কোনো সত্য তাদের সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে?
পর্বের সমাপ্তি।
পরবর্তী পর্বে: পর্ব ১৪: সত্যের মুখোমুখি
তারা কি ষড়যন্ত্রের পেছনের সত্য উদঘাটন করতে পারবে? নাকি নতুন কোনো রহস্য তাদের জীবনে আরও অশান্তি নিয়ে আসবে?
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments