নীরব ভালোবাসা
শ্রাবণ আর সোহানা, দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পড়ে। যদিও একই বিভাগে, তাদের মধ্যে কখনোই তেমন কথা হয়নি। শ্রাবণ একটু লাজুক প্রকৃতির আর সোহানা উল্টো, খুবই প্রাণবন্ত। শ্রাবণ সবসময় ক্লাসে এক কোণায় বসে বইয়ে ডুবে থাকত, আর সোহানাকে দেখা যেত তার বন্ধুবান্ধবের সাথে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠতে। তবে, শ্রাবণের নজর সবসময় সোহানার দিকেই থাকত। সে বুঝতেই পারত না কেন, কিন্তু সোহানার হাসিটা যেন তার মন ছুঁয়ে যেত।
একদিন ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গিয়ে সোহানা একটা গল্পের বই খুঁজছিল, যেটা লাইব্রেরির তালিকায় ছিল না। হঠাৎ শ্রাবণ পাশে এসে বলল, "এই বইটা আমার কাছে আছে। চাইলে তোমাকে পড়ার জন্য দিতে পারি।" সোহানা অবাক হলো, কারণ সে ভাবতেই পারেনি শ্রাবণ তার সাথে এমন করে কথা বলবে। সোহানা হাসিমুখে বলল, "অবশ্যই, আমি নেব!"
এই প্রথম তাদের মধ্যে আলাপ শুরু হলো। সেই গল্পের বইয়ের মাধ্যমে তাদের পরিচয় ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হলো। প্রতিদিন ক্লাস শেষে দুজনই লাইব্রেরিতে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলত। কখনো বই, কখনো সিনেমা, আবার কখনো জীবন নিয়ে। সোহানার প্রাণবন্ত স্বভাব আর শ্রাবণের চিন্তাশীল মন দুজনের সম্পর্ককে এক অন্যরকম গভীরতায় নিয়ে গেল।
কিন্তু শ্রাবণ তার মনের কথাটা সোহানাকে বলতে পারছিল না। সে ভয় পেত, যদি সোহানা তার অনুভূতিটা মেনে না নেয়। তবে সোহানা সবসময়ই বুঝত, শ্রাবণ তার প্রতি আলাদা এক অনুভূতি পোষণ করে। একদিন হঠাৎ, সোহানা বলল, "শ্রাবণ, তুমি আমাকে কখনো কিছু বলতে চাওনি?"
শ্রাবণ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর আস্তে আস্তে বলল, "হয়তো বলার সাহস পাইনি, তবে তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে খুব মূল্যবান। তুমি না থাকলে হয়তো আমি জীবনকে এভাবে চিনতে পারতাম না।"
সোহানা হাসিমুখে তার হাতটা ধরে বলল, "তুমি যা অনুভব করো, আমিও তাই করি। আমাদের এই নীরব ভালোবাসাটা যেন সবসময় এরকমই সুন্দর থেকে যায়।"
সেই দিন থেকেই তাদের সম্পর্ক একটা নতুন পর্যায়ে পৌঁছালো। শ্রাবণ আর সোহানা আর নীরব নয়, তারা একে অপরকে নিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করল। তবে তাদের মধ্যে একটা নীরব প্রতিশ্রুতি থেকে গেল - তারা সবসময় একে অপরের পাশে থাকবে, এমনকি শব্দহীন ভাবেও।
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments