একফালি আকাশ
রাতুল আর মেঘলার পরিচয় খুবই অদ্ভুতভাবে হয়েছিল। দুজনের বাসাই ছিল একই পাড়ায়, অথচ তারা কখনো কথা বলেনি। একটা সন্ধ্যায়, রাতুল ব্যস্ত ছিল অফিসের কাজ নিয়ে, আর মেঘলা সেদিন একটু হাঁটতে বের হয়েছিল। হঠাৎ করেই এক প্রবল বৃষ্টি নেমে এলো। মেঘলা তাড়াহুড়ো করে বাঁচার চেষ্টা করছিল, কিন্তু ছাতা সাথে ছিল না। ঠিক সেই সময়ে রাতুল সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, সে মেঘলাকে দেখে হাসিমুখে ছাতার নিচে আশ্রয় দিল। দুইজনেই একটু লজ্জা পেয়ে গেল। প্রথম আলাপটা এমনই অদ্ভুত ছিল তাদের।
সেই দিনের পর থেকে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে কথা শুরু হলো। মেঘলা প্রাণবন্ত, হাসিখুশি আর রাতুল ছিল একটু লাজুক, ভাবুক। মেঘলা ছোট ছোট হাসি-কান্না দিয়ে রাতুলের জীবনে এক অন্যরকম আনন্দ এনে দিলো। দুইজনেই প্রতিদিন একসাথে হাঁটতে বের হতো, কখনো চা-এর দোকানে বসে আড্ডা দিতো। তাদের দুজনের ভালো লাগাগুলো ধীরে ধীরে যেন ভালোবাসায় পরিণত হলো।
একদিন রাতুল বলল, "মেঘলা, তোমার হাসি যেন একফালি আকাশের মতো, যেটা আমাকে সবসময় সান্ত্বনা দেয়। তোমার সাথে থেকে আমি যেন নিজেকে নতুনভাবে চিনতে পারি।" মেঘলা হেসে উত্তর দিল, "তুমি আমার জীবনে এমন একজন যাকে ছাড়া এই আকাশটাও অর্থহীন মনে হয়।"
তারা দুইজন একসাথে ছোট ছোট স্বপ্ন বুনছিলো, যেন একসাথে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। তবে এই সুখী জীবনের ওপর হঠাৎই কালো মেঘ নেমে এলো। মেঘলার পরিবার তাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল। মেঘলা পরিবারের সম্মান রাখতে রাজি হয়ে যায়, তবে তার মন বারবার রাতুলের জন্য কাঁদছিল।
রাতুল এটা শুনে ভীষণ ভেঙে পড়ে। সে নিজেই ভেবেছিল, হয়তো মেঘলাকে নিয়ে তার আর কোনো অধিকার নেই। কিন্তু একদিন রাতুলের দরজায় মেঘলা হাজির হলো, মেয়েটা তার হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলল, "আমার জীবনের একমাত্র সত্যি তুমি, রাতুল। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।"
রাতুল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, "তবে আসো, আমাদের ভালোবাসাকে শক্তি বানাই। পরিবারকে আমাদের স্বপ্নের কথা জানাই।"
দুজনেই ধৈর্য ধরে পরিবারকে বোঝায়, মেঘলার পরিবারও ধীরে ধীরে তাদের ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখায়। সময়ের পরিক্রমায়, তাদের সম্পর্ক পরিণতি পায়, আর দুজনের হাত ধরেই তারা নতুন জীবনের পথচলা শুরু করে।
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments