"আলোছায়ার গল্প"
বিকেলবেলা বয়ে চলেছে ঢাকার অলি-গলিতে। পুরানো ঢাকার সরু রাস্তাগুলোর একদিকে থরে থরে দোকান সাজানো, আর অন্যদিকে কোলাহলময় বাজার। সেই ভিড়ে পড়ন্ত রোদে হাঁটছিলো নীলয়। সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে সে, আর নতুন এই শহরে তার প্রতিটি দিনই এক নতুন অভিজ্ঞতা।
হঠাৎ, সামনে দিয়ে এক মেয়ে হেঁটে যেতে দেখে নীলয় থমকে দাঁড়ায়। মেয়েটির নাম রুশনি। গায়ে হালকা সাদা সালওয়ার, কাঁধে একটা পুরানো খয়েরি রঙের ব্যাগ, আর চোখে ঘন কাজল। রুশনির মুখে ছিল এক ধরনের নিঃশব্দ সৌন্দর্য, যেন সূর্যের আলো ছুঁয়ে যায় তাকে কিন্তু সে নিজে আলো ছড়ায় না।
নীলয়ের কৌতূহল বাড়ে, কিন্তু সে কিছুই বলতে সাহস করে না। এরপর থেকে রোজ বিকেলে নীলয় সেই একই জায়গায় আসতে শুরু করে, একটাই আশায়—আরেকবার রুশনিকে দেখবে। আর তাদের দূর থেকে দেখা হয়, কিন্তু কেউ কাউকে কিছুই বলে না।
দিনের পর দিন কেটে যায়, আর নীলয় মনে মনে তাকে নিয়ে একটা ছোট্ট স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। একদিন সাহস করে সে একটি চিঠি লেখে, "তুমি জানো না আমি কে, কিন্তু তোমার মুখের নীরবতা যেন আমাকে অনেক কথা বলে। যদি কখনো আমার সাথে কথা বলতে চাও, তবে কাল বিকেলে এই রাস্তায় আমার জন্য অপেক্ষা কোরো।" চিঠিটা রেখে চলে আসে নীলয়, রুশনির সঠিক ঠিকানায়।
পরদিন বিকেলে রুশনি ঠিক সেই রাস্তায় অপেক্ষা করে। নীলয় আসতেই রুশনির চোখে এক আশ্চর্য মিষ্টি হাসি খেলে যায়। দু'জনের মাঝে প্রথমবারের মতো একটা ছোট্ট সংলাপ হয়, অথচ তাতে ছিল এক গভীর সংযোগ। তারা বুঝতে পারে, শুধু আলাপ নয়, তাদের ভিতরে একটা গভীর বোঝাপড়া আছে।
তারপর থেকে বিকেলগুলো বদলে গেল। তারা একসাথে ঢাকার গলিপথ ধরে হাঁটে, পুরনো শহরের অলি-গলির গল্প শুনতে শুনতে সময় কাটায়। নীলয় শহরের নতুনত্ব আর রুশনির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোকে আপন করে নিতে থাকে। আর রুশনি ধীরে ধীরে তার নীরবতার মাঝে এক আলোকিত পৃথিবী খুঁজে পায়, যা আগে কখনো সে অনুভব করেনি।
নীলয় আর রুশনির সম্পর্কের মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই। শহরের আলোছায়া গায়ে মেখে, তারা একে অপরের সাথে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে থাকে। তাদের জীবনের গল্প আলোকছায়ায় মাখা, যার পরিণতি হয়তো এক সরল প্রেমে, আবার হয়তো না।
তবে তারা জানে, তাদের এই সময়ের গল্পটাই আসল, বাকি সব শুধুই কল্পনা।
©2024, Easy Tech Solution
0 Comments